এম.শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার::
কক্সবাজার জেলার উপকূূলবর্তী নিম্নাঞ্চলের দুই শতাধিক গ্রাম পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারে পানিতে ফের প্লাবিত হয়েছে। গত শনিবার রাত থেকে পূর্ণিমার জোয়ারের পানিতে উপকূলীয় এলাকার পানি বন্দী হয়ে পড়েছে লাখ লাখ মানুষ। ফের ভেঙ্গে গেছে বিধবস্ত বেড়িবাঁধ ও রাস্তা ঘাট। ডুবে গেছে ঘরবাড়ি, ফসলি জমি ।
জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, কক্সবাজার সদর ও টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপে ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করায় অনেক পরিবার আশ্রয় কেন্দ্রে ও উচু জায়গায় নিরাপদে ঠাঁই নিয়েছে।
স্থানীয় সুত্রে জানাগেছে, কুতুবদিয়ার ৩০ গ্রাম, মহেশখালী উপজেলার ধলঘাটা, কালারমারছড়া ও মাতারবাড়ি ইউনিয়নের ৮০ গ্রাম, টেকনাফের ৪০ গ্রাম, পেকুয়ায় ৩০ গ্রাম এবং কক্সবাজার সদরের ২০ গ্রামে পূর্ণিমার জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে।
কুতুবদিয়া উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের বাসিন্দা ও ২৯ এপ্রিল স্মৃতি পরিষদ চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ ইয়াহিয়া খান কুতুবী জানান, গতমাসে ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত কুতুবদিয়া উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের বেড়িবাধঁ আবারও ভেঙ্গে তলিয়ে গেছে ৫‘শ বসত-ঘর। গত মাসের ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনো ঘুরে দাড়াতে পারেনি। শনিবার থেকে পূর্ণিমার অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে উত্তর ধুরুং এলাকায় সাগরের লবনাক্ত পানি প্রবেশ করছে। আকবর বলী পাড়া ঘাট, পূর্ব চর ধুরুং পাউবো‘র কাচা বেড়িবাঁধ ভেঙে লবনাক্ত পানি ভিতরে প্রবেশ করায় চলছে জোয়ার ভাটা। উত্তর ধুরুং, আলী আকবর ডেইল, কৈয়ারবিল ইউনিয়নেও জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়াও প্রায় ওই সব ইউনিয়নের মানুষের চলাচলের রাস্তাগুলো চলাচল অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
এছাড়া তলিয়ে দিচ্ছে পশ্চিম চরধুরুং, চাইন্দার পাড়া, নজু বাপের পাড়া, ফয়জানি পাড়া ও বৃহত্তর আকবর বলী পাড়ার অন্তত: ৫’শ বাড়ীঘর ও বসত-ভিটা। পূর্বচর ধুরুং ও পশ্চিমচর ধুরুং এলাকায় ৩‘শ বাড়ি-ঘরে এখন গলায় গলায় পানি। বাড়ির মালামাল সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে স্থানীয় লোকজন। এছাড়াও জোয়ারের পানিতে প্রায় ৭ শত বসতবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। সেখানে সুপেয় পানিয় জলের তীব্র সংকটও দেখা দিয়েছে। এলাকার হাজার হাজার মানুষ চরম দূর্ভোগের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। এলাকাগুলো বিধবস্ত বেড়িবাঁধ দ্রুততম সময়ে মেরামত ও এলাকাটিকে দূর্গত এলাকা ঘোষণার দাবী জানান তিনি।
মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়িতে দিনের বেলায় জোয়ারের পানিতে মহেশখালীর ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, ও কুতুবজোম ইউনিয়নে আবারো বন্যা দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যেই দিন কাটাচ্ছে মানুষগুলো।
কুতুবজুম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন খোকন জানিয়েছেন, সোনাদিয়া দ্বীপের ঘটিভাঙ্গা পশ্চিমপাড়া এলাকার অন্তত ২০ টি বসতবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। পানিয় জল ও খাবার সঙ্কটে মানবেতর জীবনযাপন করছে এখানকার লোকজন। গত শনিবার থেকে পানিবন্দি মানুষগুলোর জন্য পৌঁছেনি কোন ধরণের সাহায্য।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানান, অস্বাভাবিক জোয়ারে তার ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম আবারো প্লাবিত হয়েছে। একের পর এক ঘুর্ণিঝড়ে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে মানুষজন পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জোয়ারের পানি ঢুকে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের অর্ধশতাধিক ঘড়বাড়ি, মসজিদ-মাদ্রাসা প্লাবিত হয়েছে। ডুবে গেছে ফসলি জমি ও ক্ষেত খামার। সাগরের করাল গ্রাসে বিলিন হয়েছে উপকূলীয় বেড়ীবাঁধ। বিশেষ করে দ্বীপের পশ্চিমপাড়া, মাঝেরপাড়া, জাইল্যাগুদা, দক্ষিণপাড়া প্লাবিত হয়েছে। এতে প্রায় ৪৫ হাজার মানুষের দুর্ভোগে পড়েছে। বেঁিড়বাধের ভাঙ্গন পরিস্থিতি ক্রমান্বয়ে মারাত্মক আকার ধারণ করায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুঁটছে লোকজন। এই সব গ্রামের মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ও উচু খোলা জায়গায় অবস্থার নেয়। কিন্তু পর্যাপ্ত আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় এবং একটি আশ্রয় কেন্দ্র পানিতে ডুবে থাকায় অনেককে গাদাগাদি করে থাকতে দেখা গেছে।
কক্সবাজার শহরের সমিতিপাড়া, নাজিরারটেক, নতুন বাহারছরা, নুনিয়াছটা, টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে। এখানেও শত শত ঘরবাড়ি জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি মানুষগুলো চরম দূর্ভোগে পড়েছে।
পেকুয়ার সদর ইউনিয়নের গত এক দিনের ব্যবধানে ফের প্লাবিত হয়েছে। মেহেরনামা বাঘগুজারা পয়েন্টে পৃথক দু’টি বেড়িবাঁধের বিলীন অংশ দিয়ে মাতামুহুরী নদীর পানি সরাসরি লোকালয়ে প্রবেশ করায় সদর ইউনিয়নের পুরো অংশ পানিতে নিমজ্জ্বিত রয়েছে। গত এক মাসের ব্যবধানে এ ইউনিয়নের নন্দীর পাড়া, শওকত পাড়া, বলির পাড়া, মুরার পাড়া, চড়া পাড়া, চইর ভাঙ্গা, হরিনা ফাড়ি, সরকারী ঘোনা, বিলহাসুরা, ছিরাদিয়া, গোয়াখালী, বটতলীয়া পাড়া, জালিয়া খালী, মগকাটা, মৌলভী পাড়া, শেখের কিল্লা ঘোনা, মিয়া পাড়া, সাবেক গুলদি, টেকপাড়া, বিশ্বাস পাড়াসহ বিপুল গ্রামের অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েছে। এ ইউনিয়নের জন জীবন চরম হুমকির মধ্যে পড়েছে।
কক্সবাজার পানি উন্নয় বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সবিবুর রহমান জানান, ঘুণিঝড় রোয়ানু’র আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত বেড়িবাঁধগুলো দিয়ে পুর্ণিমা জোয়ারের পানি যাওয়া আসা করছে। চলমান পূর্ণিমায় পানির উচ্চতা বাড়ায় জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বেড়ীবাঁধ পুননিমার্ণের জন্য দ্রুততার সহিত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বিষয়টি ইতোমধ্যেই উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
পাঠকের মতামত